
আপনাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। আশা করি আল্লাহর রহমতে সকলেই ভালো আছেন। আপনাদের দোয়ায় আজকে আবার আমি আপনাদের কাছে উপস্থিত হলাম সুন্দর একটি প্রয়োজনীয় পোস্ট নিয়ে।আজকে আমরা এমন একটি বিষয়ে কথা বলবো, যা যুগে যুগে আলোচিত, কখনও সমালোচিত — ইসলামে নারীর অধিকার ও শক্তিকরণ। বর্তমান সমাজে অনেকে ধারণা করে থাকেন যে ইসলাম নারীদের পিছনে ফেলে রেখেছে। কিন্তু সত্যতা হচ্ছে, ইসলামই প্রথম ধর্ম যেখানে নারীকে সম্মান, অধিকার ও মর্যাদার আসনে বসানো হয়েছে।
ইসলাম পূর্ব যুগে নারীর অবস্থা
জাহেলিয়াত যুগে নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। নারী ছিল সম্পত্তির অংশ; নিজে সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকারও ছিল না। তাদের শিক্ষা, মতামত কিংবা ব্যক্তিত্ব ছিল চরম উপেক্ষিত।
ইসলামের আগমনে নারীর মর্যাদা
ইসলাম নারীকে মুক্তির আলো দেখায়। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন:
"আমি তোমাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ—উভয়কেই একটি জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছি..." (সূরা হুজুরাত: ১৩)
নারী ও পুরুষের মূল্যে ভেদ নেই; তাকওয়া ও সৎকর্মই একজন মানুষকে উত্তম করে। তদপুরী মানুষের চেহারা, টাকা পয়সা, জায়গা জমি কিছুই মানুষকে উত্তম করতে পারেনা, একমাত্র তাকওয়া ও সৎকর্ম ছাড়া। আর এটি ছিল আরব সমাজে এক ঐতিহাসিক বিপ্লব।
কুরআনে নারীর অধিকার
কুরআনে বহু জায়গায় নারীর সম্মান, শিক্ষা ও সম্পত্তির অধিকার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে:
- শিক্ষার অধিকার: হাদিসে বলা হয়েছে, “জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ” — নারী-পুরুষ নির্বিশেষে।
- উত্তরাধিকার: নারী পিতা, স্বামী, ভাই, সন্তানের পক্ষ থেকে উত্তরাধিকার পায়।
- বিবাহে স্বাধীনতা: নারীর সম্মতি ছাড়া কোনো বিয়ে বৈধ নয়।
হযরত খাদিজা (রা.): নারীর স্বাধীনতার আদর্শ
হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন ব্যবসায়ী, সফল উদ্যোক্তা এবং নবী করিম (সাঃ)-এর স্ত্রী। তিনি নিজে প্রস্তাব দিয়ে রাসূল (সাঃ)-কে বিয়ে করেন এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
হযরত আয়েশা (রা.): জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার প্রতীক
হযরত আয়েশা (রা.) ছিলেন অন্যতম মহান আলিমা। অসংখ্য হাদিস তার বর্ণনায় সংরক্ষিত। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় জ্ঞানেও তিনি ছিলেন প্রাজ্ঞ।
ইসলামে পর্দা: নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতীক
পর্দা বা হিজাব অনেকেই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেন। অথচ এটি নারীর নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রতীক। এটি কোনো বাধা নয়, বরং নিজের পরিচয় রক্ষার এবং আত্মমর্যাদা প্রকাশের মাধ্যম।
নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ
ইসলাম নারীদের কর্মে বাধা দেয় না; বরং নিরাপদ ও শালীন পরিবেশে নারী চিকিৎসক, শিক্ষক, উদ্যোক্তা—সবই হতে পারে। হযরত শিফা (রা.) ছিলেন একাধারে ডাক্তার ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব।
আধুনিক সমাজ ও মুসলিম নারীদের চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে কিছু সমাজে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের অধিকার সীমাবদ্ধ করা হয়, যা ইসলামের মূলনীতি থেকে বিচ্যুত। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা জানলে নারীর অবস্থান উন্নত হয়, অবদমন নয়।
উপসংহার
ইসলাম নারীদের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং শক্তির উৎস। ইসলাম নারীকে দিয়েছে অধিকার, মর্যাদা ও বিকাশের পথ। যারা ইসলামকে জানেন, তারা বুঝবেন নারী শক্তিকরণ কেবল পশ্চিমা ধারণা নয়, বরং এটি ইসলামের মুল শিক্ষা।
0 মন্তব্যসমূহ