ভূতের গল্প

👻

বর্ষার শেষে শীতের হালকা পরশ। ঢাকার কনক্রিটের দমবন্ধ পরিবেশ থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি নিতে রেদোয়ান এসেছিল পূর্ব বাংলার ভাটিয়ারচর গ্রামে। সে একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসের পুরোনো ধূলিমাখা স্তরে গড়িয়ে বেড়ানোই যেন তার জীবন। গ্রামের শান্ত, নির্জন পরিবেশ আর শতবর্ষ পুরনো কাহিনিগুলো তাকে বরাবরই টানে।

গ্রামে ঢুকতেই তার চোখে পড়ে এক অদ্ভুত ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনা। স্থানীয়রা সেটিকে “চণ্ডীমন্দির” বলে ডাকলেও, আজকাল কেউ ওদিক মাড়ায় না। কেবল গৃহস্থালির বুড়োরা মাঝে মাঝে মুখচোরা স্বরে বলে ওঠেন—

“ওইখানে যাইস না বাবা… পূজার রাতের আগুন এখনো নিভে নাই…”

কৌতূহলী রেদোয়ান আর বসে থাকতে পারেনি। সে পরদিন সকালেই পুরনো বাড়িটা দেখতে যায়। গাছ-গাছালি, লতাপাতা দিয়ে ঢেকে যাওয়া সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তার মনে হচ্ছিল—এখানে কিছু লুকিয়ে আছে। ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই এমন কিছু। সে হাতে হাতে মাটি খুঁড়তে থাকে। কিছু প্রাচীন মূর্তি বের হয়। মাটিতে খোদাই করা কিছু চিহ্ন… যেন কারো অভিশাপ ঝরে পড়েছে সেই রেখার প্রতিটি বাঁকে।

তবে সবচেয়ে অদ্ভুত ছিল একটি অর্ধেক ভাঙা পাথরের ফলক। সেখানে সংস্কৃত ভাষায় কিছু লেখা ছিল, আর নিচে আঁকা ছিল এক নারীর চিত্র—রক্তে ভেজা শাড়ি, পেছন থেকে চুল দিয়ে ঢাকা মুখ। যেনো সে মুখ লুকিয়ে আছে, অথবা কারো মুখ কেড়ে নিয়েছে।

রেদোয়ান সেদিন সন্ধ্যাবেলা স্থানীয় লাইব্রেরিতে গিয়ে গ্রামের ইতিহাস খোঁজে। সেখানে পাওয়া যায় এক রহস্যময় পুঁথি। পুঁথিতে লেখা:

“পূজার রক্ত বন্ধ হইলে চণ্ডী ক্রুদ্ধ হন। তিনি ফিরেন রাত্রি ঘিরে, মুখহীন রূপে…”

রেদোয়ান ভাবে, “পুরোটাই কুসংস্কার! মানুষ অজানাকে ভয় পায় বলেই এমন গল্প বানায়।”

সে রাতে, সে গ্রামে একটি মাটির ঘরে থেকে যায়। শীত পড়েছে, বাইরে হালকা কুয়াশা, বাতাসে যেন অজানা গন্ধ। হঠাৎ মাঝরাতে তার ঘুম ভাঙে। দরজা খোলা। বাতি নিভে গেছে। একটা ঠান্ডা হাওয়া বইছে ঘরের ভিতর দিয়ে।

সে উঠে দাঁড়ায়। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দরজা বন্ধ করতে যাবে, তখনই তার চোখ পড়ে আয়নার দিকে।

আয়নাটা ঘরের এক কোণায় রাখা। সেখানে সে দেখে…
কেউ দাঁড়িয়ে আছে!

সাদা শাড়ি, মুখ নেই… ফাঁকা গহ্বরের মত জায়গা যেখানে মুখ থাকার কথা… আর সেই ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

সে চিৎকার করে ওঠে। চারপাশ অন্ধকার। একটা শীতল কণ্ঠ কানে ভেসে আসে:

“আমার পূজা কে বন্ধ করল...? আমার রক্ত কোথায়?”

রেদোয়ান হুঁশ ফেরে—সে নিজের খাটে বসে, ঘেমে একাকার। কিন্তু দরজাটা? সেটা সত্যিই খোলা! বাইরে কেউ ছিল… নাকি এখনো আছে?

সে বুঝতে পারে—এটা কেবল ইতিহাস নয়… এটা এক জ্যান্ত অভিশাপ।
চণ্ডী ফিরে এসেছে…


🔮 পরবর্তী পর্বে:

  • রেদোয়ান খাটের নিচে কী খুঁজে পাবে?
  • চণ্ডীর পূজা কেন বন্ধ হয়েছিল?
  • গ্রামের পুঁথিতে কি কোনো মুক্তির পথ লেখা আছে?